বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বঙ্গবন্ধুর জন্ম

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বঙ্গবন্ধুর জন্ম

বুধ জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

ইতিহাসের এই দিনে

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ (৩রা চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ) রাত ৮টায় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শেখ বংশের গোড়াপত্তনকারী শেখ বোরহানউদ্দিনের বংশধর।

বঙ্গবন্ধুর জন্ম

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই সেখানে স্থান পায়, যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ।

তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এ গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিন’।
ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে শ্রীলঙ্কা অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে।
২০০০: উগান্ডায় গীর্জায় অগ্নিকাণ্ডে ৫৩০ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয় এবং পরে আরও ৩৯৪টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

জন্ম
১০৭৮: আব্দুল কাদের জিলানি, ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও ধর্মপ্রচারক
১৮৭৩: মার্গারেট বন্ডফিল্ড, ইংল্যান্ডের প্রথম নারী কেবিনেট মন্ত্রী
১৮৮১: ওয়াল্টার রুডলফ হেস, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুইস শারীরবিজ্ঞানী
১৯২০: শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ (৩ চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জনসাধারণের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবেই অধিক পরিচিত তিনি।

শেখ মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুজিবকে বাংলাদেশের ‘জাতির পিতা’ গণ্য করা হয়।

ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে তিনি একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বাধ্য হন। এর সাত মাস পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবার নিহত হন। কেবল দুই কন্যা— শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থানের কারণে বেঁচে যান। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

১৯৬২: কল্পনা চাওলা, তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রকৌশলী ও মহাকাশচারী

মৃত্যু
১৯৩৭: অস্টিন চেম্বারলেইন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইংরেজ রাজনীতিবিদ
১৯৫৬: আইরিন জোলিও-কুরি, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি পদার্থবিদ
১৯৫৭: রামোন ম্যাগসেসে, ফিলিপিনো জেনারেল, রাজনীতিবিদ ও সপ্তম প্রেসিডেন্ট
১৯৮৩: হ্যাল্ডান কেফার হার্টলাইন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান শারীরবিজ্ঞানী
১৯৯৬: অনিল চট্টোপাধ্যায়, প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা
২০০৭: জন বাকাস, মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী
২০১৫: বব এপলইয়ার্ড, ইংরেজ ক্রিকেটার
২০১৯: কৌতুক চলচ্চিত্র অভিনেতা চিন্ময় রায়

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস। মুক্তিযুদ্ধের এই মহানায়ক ১৯২০ সালের এই দিনে ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকালে ‘খোকা’ নামে পরিচিত সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।

জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ দিবসটি উদ্‌যাপন করবে। দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকা, টুঙ্গিপাড়াসহ সারা দেশে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শেখ মুজিবুর রহমান কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবার কারাবরণ করেন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিণত হন।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত করছিলেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হন তিনি। বাণী বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তাঁর কর্ম ও আদর্শ চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালি জাতির নন, তিনি বিশ্বে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তির দূত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আসুন, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব শিশুদের কল্যাণে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। সবাই মিলে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

কর্মসূচি

দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ছয়টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবে। বাদ জোহর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবে প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া সেখানে শিশু সমাবেশ, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল রোববার বেলা তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্‌যাপন করা হবে। রাজধানীসহ সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রেকর্ড বাজানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

শৈশব, শিক্ষা ও জীবনসংসার

জন্ম ও বংশ-পরিচয়

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গােপালগঞ্জ জেলার ঘাঘাের ও মধুমতি বিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক বনেদি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ আদালতে সেরেস্তাদারের চাকরি করতেন। মাতার নাম সায়েরা খাতুন। শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব-পুরুষরা ছিলেন ইরাক থেকে আগত দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশধর। বাগদাদের হাসানপুর নামক স্থানে শেখ আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র শুরুতে শেখ বােরহান উদ্দিনের কথা বলেছেন। শেখ বােরহান উদ্দিনের ছিল তিন পুত্র সন্তান। তারা হলেন- শেখ একরাম, শেখ তাজ মােহাম্মদ ও শেখ কুদরত উল্লা। শেখ একরামের দুই ছেলে- শেখ জাকির ও শেখ ওয়াসিম উদ্দিন। বঙ্গবন্ধুর দাদার নাম শেখ আব্দুল হামিদ। তিনি ছিলেন শেখ জাকিরের সন্তান এবং দরবেশ শেখ আউয়ালের কয়েক জন্মের উত্তরাধিকারী। শেখ জাকিরের তিন ছেলে- শেখ আব্দুল মজিদ, শেখ আব্দুল রশিদ ও শেখ আব্দুল হামিদ। শেখ আবদুল হামিদের তিন ছেলে- শেখ লুৎফর রহমান, শেখ শফিউর রহমান ও শেখ হাবিবুর রহমান। আর এই শেখ লুৎফর রহমানের ছেলেই হলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমাদের বাড়ির দালানগুলাের বয়স দুইশত বৎসরেরও বেশি হবে। শেখ বােরহান উদ্দিনের পরে তিন-চার পুরুষের কোনাে ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে শেখ বােরহান উদ্দিনের ছেলের ছেলে অথবা দু-এক পুরুষ পরে দুই ভাইয়ের ইতিহাস পাওয়া যায়। এদের সম্বন্ধে অনেক গল্প আজও শােনা যায়। এক ভাইয়ের নাম শেখ কুদরত উল্লাহ, আর এক ভাইয়ের নাম শেখ একরাম উল্লাহ। আমরা এখন যারা আছি তারা এই দুই ভাইয়ের বংশধর। এই দুই ভাইয়ের সময়েও শেখ বংশ যথেষ্ট অর্থ ও সম্পদের অধিকারী ছিল। জমিদারের সাথে তাদের বিরাট ব্যবসাও ছিল। শেখ কুদরত উল্লাহ ছিলেন সংসারী ও ব্যবসায়ী; আর শেখ একরাম উল্লাহ ছিলেন সমাজের সরদার, আচার-বিচার তিনিই করতেন।

শেখ বােরহান উদ্দিনের পিতা ছিলেন তেকড়ী শেখ। তিনি সােনারগাঁও-এ অনেক কাল বসবাস করেন। তেকড়ী শেখের পিতা ছিলেন শেখ জহির উদ্দিন। তিনি তার পিতার আদর্শকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। শেখ জহির উদ্দিনের পিতা ছিলেন শেখ আউয়াল। যিনি এলাকায় দরবেশ আউয়াল নামে সুপরিচিত ছিলেন। তাকে বায়েজিদ বােস্তামি (রহ.) স্নেহ করতেন। বায়েজিদ বােস্তামি (রহ.) সম্ভবত ১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন। তখন মুসলমানরা উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের দখলে তখন অনেক এলাকা। এই বঙ্গ চিরকালই সুজলা-সুফলা। ইরাকের এই ইসলাম প্রচারক বঙ্গের প্রকৃতি, স্থানীয় জনপদ ও মানুষজনের সহজ-সরল আচরণের কথা শুনে খাইবার গিরিপথ হয়ে প্রথমে দিল্লি, পরে এই বঙ্গে আগমন করেন। অনেকের ধারণা, তিনি জাহাজে চড়ে এসেছিলেন বলে চট্টগ্রামে আস্তানা গেড়েছিলেন। বায়েজিদ বােস্তামি ছিলেন সুফি সাধক। মানুষকে তিনি ধর্মের শান্তি ও কল্যাণের কথা শোনাতেন। মানুষ তার কথা শুনতাে মুগ্ধচিত্তে। এই বঙ্গে তিনি একা আসেন নি। তার ছিল বেশ কজন সঙ্গী-সাথী। তারাও ছিলেন ধর্মপ্রাণ। তাদের মধ্যে শেখ আউয়াল দরবেশও ছিলেন। বায়েজিদ বােস্তামি (রহ.) একদিন শেখ আউয়ালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন- মেঘনা পাড়ের এলাকায় যাওয়ার। শেখ আউয়াল গুরুর আদেশ মেনে চলে আসেন মেঘনা বিধৌত সােনারগাঁও-এ। তার পুত্রের নাম জহির উদ্দিন এবং নাতির নাম তেকড়ী শেখ।

দাদা ও বাবার পর, সােনারগাঁও-এ তেকড়ী শেখ অনেককাল বসবাস করলেও, একসময় ব্যবসার উদ্দেশ্যে খুলনায় পাড়ি জমান। দাদার আস্তানাটির দায়িত্ব দিয়ে যান বিশ্বস্ত লােকদের। তেকড়ী শেখের উত্তরাধিকারী–পুত্র শেখ বােরহান উদ্দিন মধুমতি ও ঘাঘাের নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা টুঙ্গিপাড়া গ্রামটির কথা শােনেন তার বন্ধুর কাছে। রূপসা নদী পাড়ি দিয়ে একদিন তিনি বন্ধুর সাথে চলে আসেন টুঙ্গিপাড়ায়। বিয়ে করেন কাজী পরিবারে, ঘর বাধেন। এভাবেই টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারের গােড়াপত্তন ঘটে।

উল্লেখ্য, শেখ আবদুল মজিদের বংশধর বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন এবং শেখ ওয়াসিম উদ্দীনের বংশধর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা। শেখ ফজিলাতুননেছার পিতার নাম মাে. জহুরুল হক (দুদু মিয়া) ও দাদার নাম শেখ মাে. আবুল কাশেম। সবাই শেখ শেখ বােরহান উদ্দিনের বংশধর।

বংশের পূর্বাপর

শেখ মুজিবুর রহমানের বংশ বিস্তার লাভ করে দরবেশ শেখ আউয়ালের মাধ্যমে। তিনি তার গুরু বায়েজিদ বােস্তামি (রহ.) আদেশ মেনে মেঘনা বিধৌত সােনারগাঁও-এ বসবাস শুরু করেন। তৎকালীন শাসনকর্তাদের কোঠাবাড়ি ছিল এখানে। বড় বড় পালতােলা নৌকা আসে এখানটায়। মেঘনা আর সবুজ-শ্যামলিমায় আচ্ছাদিত সােনারগাঁওয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন কাড়ে দরবেশ শেখ আউয়ালের। এক সময় তার সুনামও ছড়িয়ে যায় চারদিকে। তিনি মানুষকে সত্যপথে চলার উপদেশ দেন, ধর্মের বাণী শােনান। অনেকেই তার অনুসারী হন। বিয়ে করেন স্থানীয় এক বাঙালি কন্যাকে। একদিন তার ঘর উজ্জ্বল করে পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হলাে। আদরের এ সন্তানের নাম রাখলেন শেখ জহির উদ্দিন।

শেখ জহির উদ্দিন বড় হচ্ছেন। বাবার নির্দেশ মতাে লেখাপড়া করছেন। বাবার আস্তানায় হাজারাে মানুষের আনাগোনা। বাবাকে শ্রদ্ধা করেন। শেখ জহির উদ্দিনের এসব ভালাে লাগে। কিন্তু এই ভালাে লাগা বেশিদিন টেকেনি। কথা নেই, বার্তা নেই, নেই কোনাে আয়ােজন। একান্ত আপনজনদের জানিয়ে দরবেশ শেখ আউয়াল একদিন পাড়ি জমালেন মক্কায়- উদ্দেশ্য হজব্রত পালন। দেখতে দেখতে হজ মৌসুম শেষ হলো। বছরের পর বছর গেলাে কিন্তু দরবেশ শেখ আউয়াল আর ফিরে আসেননি।

এদিকে, সুফি মতবাদে বিশ্বাসী এবং উদার হৃদয় আর মুক্তবুদ্ধির শেখ বােরহান উদ্দিন মনপ্রাণ দিয়ে গ্রহণ করলেন এদেশের ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি ও লােকাচারকে। স্থানীয় গণমানুষের সঙ্গে সৃষ্টি করলেন একাত্মবােধ। শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সুফি দরবেশ শেখ আউয়ালের সপ্তম এবং শেখ বােরহান উদ্দিনের চতুর্থ বংশধর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ নিবন্ধে বলেছেন, ‘আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জমিজমা ক্রয় করে বসতির জন্য কলকাতা থেকে কারিগর ও মিস্ত্রি এনে দালানবাড়ি তৈরি করেন। যা সমাপ্ত হয় ১৮৫৪ সালে। এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই দালানের ধ্বংসাবশেষ। ১৯৭১ সালের যে দুটো দালান বসতি ছিল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আগুন দিয়ে সে-দুটোই জ্বালিয়ে দেয়। এই দালান কোঠায় বসবাস শুরু হবার পর ধীরে ধীরে বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে আর আশপাশে বসতির সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এই দালানেই উত্তর-পূর্ব কোণে টিনের চৌচালা ঘর তােলেন আমার দাদার বাবা শেখ আবদুল হামিদ। আমার দাদা শেখ লুৎফরর রহমান এই বাড়িতেই সংসার গড়ে তােলেন।’

টুঙ্গিপাড়ার সন্তান

আড়িয়াল খার একটি শাখা ভাঙ্গা-টেকের হাট ও রাজৈর হয়ে বাইগ্যার বিলের মধ্যে পতিত হয়েছে। পশ্চিমে মধুমতি আর পূর্বে ঘাঘোর নদী। মাঝ বরাবর জলাভূমি। টঙ্গ থেকে টুঙ্গি। জনবসতি গড়ে ওঠার পর হয় টুঙ্গিপাড়া। ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি। এই গাঁয়েরই এক বনেদি পরিবারের নাম শেখ পরিবার। এই পরিবারে জন্মেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন পিতা মাতার তৃতীয় সন্তান। জন্মের পর তার নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নাম রাখেন ‘মুজিব’ অর্থাৎ সঠিক উত্তরদাতা। মা-বাবা তাকে ডাকতেন ‘খােকা বলে।

মুজিব অলিম্পিয়
টুঙ্গিপাড়ার সন্তান

আড়িয়াল খার একটি শাখা ভাঙ্গা-টেকের হাট ও রাজৈর হয়ে বাইগ্যার বিলের মধ্যে পতিত হয়েছে। পশ্চিমে মধুমতি আর পূর্বে ঘাঘোর নদী। মাঝ বরাবর জলাভূমি। টঙ্গ থেকে টুঙ্গি। জনবসতি গড়ে ওঠার পর হয় টুঙ্গিপাড়া। ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি। এই গাঁয়েরই এক বনেদি পরিবারের নাম শেখ পরিবার। এই পরিবারে জন্মেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন পিতা মাতার তৃতীয় সন্তান। জন্মের পর তার নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নাম রাখেন ‘মুজিব’ অর্থাৎ সঠিক উত্তরদাতা। মা-বাবা তাকে ডাকতেন ‘খােকা বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *