প্রত্যাহার হওয়া তিন পুলিশ সদস্য হলেন এসআই শাহাব উদ্দিন, কনস্টেবল মো. আবদুস সালাম ও আবদুল কাদের। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুপার (সদর সার্কেল) পঙ্কজ বড়ুয়া। অপর দুই সদস্য হলেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহনেওয়াজ ও এএসপি (ট্রাফিক) মো. রফিকুর রাজা।
গত সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। এ সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামি। প্রদীপের পরনে ছিল কালো রঙের টি-শার্ট। ছড়িয়ে পড়া ছবিতে তাঁকে কালো রঙের টি-শার্ট পরে থাকতে দেখা যায়। তবে গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিন প্রদীপ আদালতে আসেন লাল রঙের টি-শার্ট পরে। আজ বুধবার তিনি আসেন নীল রঙের টি-শার্ট পরে।
সোমবার সাক্ষ্য গ্রহণের কোনো এক ফাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় বসে প্রদীপ মুঠোফোনে কথা বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলেও ওই ছবি প্রচার করা হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আদালত কক্ষের কাঠগড়ার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন প্রদীপ। হাতে থাকা মুঠোফোনে কারও সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, মুঠোফোনে ওসি প্রদীপ লম্বা সময় কথা বলেন। সম্ভবত তিনি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কথা বলার জন্য মুঠোফোনটি ওসি প্রদীপকে সরবরাহ করেন দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য।
ছড়িয়ে পড়া ছবিটির বিষয়ে আদালতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোনে কথা বলার ছবিটি সোমবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিনের হতে পারে। কে বা কারা এই ছবি তুলেছে, তা অজানা। কাঠগড়ায় মুঠোফোনে ওসি প্রদীপ কথা বলার বিষয়টি তিনি আদালতের নজরে আনবেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এজলাসে ঢোকেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। ১০ মিনিট পর প্রবেশ করেন মামলার ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। সাক্ষ্য দিতে আসেন আরও কয়েকজন সাক্ষী।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এই আদালতে আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সিফাত। ওই সময় তিনি আদালতকে বলেন, সে দিন রাতে পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে রাস্তায় ঢলে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে লিয়াকত আলীর সঙ্গে আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। তারপর সিনহার কাছে গিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে আপত্তিকর ভাষায় গালাগালি করেন। সিনহা তখনো জীবিত ছিলেন এবং ‘পানি’ ‘পানি’ করছিলেন। তখন সিনহার বুকে লাথি মারেন প্রদীপ এবং পা দিয়ে সিনহার গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শাপলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত সিনহার সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন সিফাত। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
আদালত সূত্র জানায়, ২৩ ও ২৪ আগস্ট আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এ সময় আসামিপক্ষের অন্তত ১২ জন আইনজীবী ঘটনার বিষয়ে তাঁকে দীর্ঘ জেরা করেন।
আদালতের কাঠগড়ায় বসে সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রদীপের মুঠোফোনে কথা বলার ছবি ও খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আদালত অঙ্গনে সমালোচনা চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের পিপি ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি বিচারকের নজরে আনবেন।