চোখের সাদা অংশকে বলে কনজাংটিভা। চোখ উঠলে রোগীর কনজাংটিভা লাল অথবা টকটকে লাল দেখাবে। এটি এক চোখে কিংবা দুই চোখেই হতে পারে। সাধারণত প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে।
চোখ ওঠা একটি জীবাণুঘটিত রোগ। শিশু থেকে বৃদ্ধ মোট কথা সব বয়সী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রোগটি তীব্রভাবে ছোঁয়াচে বলে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
চোখ ওঠা রোগ যেভাবে ছড়ায়
চোখে ভাইরাস দিয়ে প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। razuaman.com রোগী যখন এই অশ্রু মুছতে যায়, তখনই এটি তার হাতে এসে যায়। এরপর সেই হাত দিয়েই যা কিছুই স্পর্শ করা হোক না কেন, সেখানে ভাইরাসটি চলে আসে। যেমন কারো সঙ্গে করমর্দন, টিভি-এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার
এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদিতে চলে আসতে পারে। রোগীর ব্যবহৃত এই বস্তুগুলো কোন সুস্থ ব্যক্তি স্পর্শ করলে তার দেহেও জীবাণুটি চলে যায়। এ জন্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে বাসায় থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা আলাদা রাখা হয়।
চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ
চোখের সাদা অংশকে বলে কনজাংটিভা। চোখ উঠলে রোগীর কনজাংটিভা লাল অথবা টকটকে লাল দেখাবে। এটি এক চোখে কিংবা দুই চোখেই হতে পারে। সাধারণত প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে।
চোখ উঠলে রোগীর চোখ চুলকাবে। জ্বালাপোড়া বা খচখচে ভাব হবে। কারও কারও ক্ষেত্রে চোখের ভেতরে কিছু আটকে আছে এমন মনে হতে পারে। চোখ থেকে বারবার পানি পড়বে। চোখের পাতায় পুঁজ জমবে, যা পাপড়িতে আঠার মতো লেগে থাকবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখা যাবে চোখের পাতা দুটো জোড়া লেগে আছে। চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চোখের পাতা লাল হয়ে ফুলে চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসবে।
চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
পর্যাপ্ত যত্ন নিলে চোখ ওঠা রোগ ৭-১০ দিনের মধ্যে সাধারণত ভালো হয়ে যায়।
নিয়মিত চোখের পাতা ও পাপড়ি পরিষ্কার করতে হবে। সে জন্য তুলা অথবা নরম সুতির কাপড় কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে চেপে নিতে হবে। তারপর সেটা দিয়ে চোখের পাতা ও পাপড়ি পরিষ্কার করতে হবে। দিনে কয়েকবার এটি করা যেতে পারে। দুটি চোখের জন্য আলাদা কাপড় বা তুলা ও পানির পাত্র ব্যবহার করতে হবে।
গরম ছ্যাঁক দেয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর বরফ অথবা ঠান্ডা পানিতে কাপড় অথবা তুলা ডুবিয়ে ঠান্ডা ছ্যাঁক দেয়া যেতে পারে।
চোখের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ এ সময় করা যাবে না। যেমন বেশিক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারে থাকা এবং ছোট ছোট লেখা পড়া।
চোখ ওঠা রোগের কুসংস্কার
আক্রান্ত রোগীর চোখের দিকে তাকালে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হবে- এমন একটি ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। এটি পুরোপুরি ভুল। চোখ ওঠা রোগীর চোখের দিকে তাকালে এই রোগ হয় না।
শিশুর চোখ উঠলে যেসব কাজ ভুলেও করবেন না। ছবি সংগৃহীত
আমাদের পঞ্চইদ্রীয়ের মধ্যে দেখার মাধ্যমে চোখ খুব সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। আর এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি ছোট-বড় সবারই বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হতে পারে। চোখ ওঠা দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগ নয়। এটা একটি স্বল্পমেয়াদি রোগ। ছোট-বড় সবারই চোখ উঠতে পারে।
চোখ ওঠার লক্ষণ
১.হঠাৎ করে শিশুর চোখ লাল হয়ে যায়। অনেক সময় চোখের উপরিভাগে পাতলা ঝিল্লির নিচে ২.রক্তক্ষরণও হতে পারে।
৩.চোখের পাতা ফুলে যায়।
৪.সকালবেলা চোখে পিঁচুটি জমে চোখ আটকে যায়।
৫.সারাদিন ময়লা জমবে চোখে এবং সঙ্গে পানি পড়বে।
কী করবেন?
১.শিশুর চোখ নিয়মিত পরিষ্কর রাখুন।
২.চোখ ওঠার ফলে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হতে পারে। আর সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
৩.যেসব শিশু স্কুলে যায় তাদের ক্ষেত্রে কয়েকদিন স্কুলে না পাঠানোই ভালো।
৪.স্কুলে গেলে অন্য বাচ্চাটিও এ রোগে সংক্রমিত হতে পারে।
৫.বেশি ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে রোগীকে।
৬.তুলা ভিজিয়ে শিশুর চোখ পরিষ্কার করুন।
যা করা যাবে না
১.ঘন ঘন চোখে পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই।
২.একটি রুমাল ব্যবহার করার পর বারবার সেটা ব্যবহার করা যাবে না।
৩.টিসু পেপার ব্যবহার করার পর সেটি হাতে রেখে দেয়া চলবে না। একবার ব্যবহার করার পর ফেলে দিতে হবে।
৪.একজনের চোখের ড্রপ অন্যজনের ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে করে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
৫.শক্ত কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করা যাবে না। শিশুর চোখে কাজল দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
চোখ উঠলে শিশুকে সব ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। আর শিশুর চোখ ভালো রাখতে চাইলে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন রয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আপনিও দৈনিক যুগান্তর অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন razuslam@gmail.com
Related searches