কৃষি খামার

দেশি গরুর খামার কম টাকায় বেশি আয়

দেশি গরুর খামার কম টাকায় বেশি আয় পরিকল্পিতভাবে গাভী পালন একটা লাভজনক কার্যক্রম অল্প মাঝারি বেশি সব ধরনের পুঁজি দিয়ে সুষ্ঠুভাবে গাভী পালন করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়।
গাভী পালনের জন্য ঘরটি মোটামুটি খোলামেলা জায়গায় হতে হবে; বাঁশ, ছন, খড়, পাটখড়ি দিয়ে ঘর নির্মাণ; ঘরের মেঝে ঢালু ও ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে চোনা ও পানি গড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারে; খাদ্য ও পানির পাত্রগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করা; খাওয়া শেষ হলে পাত্রগুলো ঢেকে রাখতে হবে। গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে; প্রতিদিন নিয়মিত গোয়াল ঘরের গোবর-চোনা পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে বা গর্তে জমা করতে হবে।

যা পরবর্তীতে মূল্যবান সারে পরিণত হয়; গরুর গায়ের আঠালি, ডাসা (মাছি), জোঁক অবাঞ্ছিত পোকামাকড় বেছে ফেলতে হবে; গরুর স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে; উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে গবাদিপশুকে গোবসন্ত, তরকা, বাদলা, গলাফুলা, ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে; গবাদিপশুর রোগ দেখা দিলে প্রাণিচিকিৎসক বা নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

আজকে একটু আলোচনা করবো দেশী জাতের গরু দিয়ে কিভাবে লাভজনক খামার ব্যবসা আপনি অল্প পুঁজি দিয়ে করতে পারেন সেই ব্যপারে। অনেক নতুন এবং তরুণ উদ্যোক্তা আছেন যারা গরু পালনে খুব উৎসাহী এবং গরুর খামার ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তাদের জন্য এই প্রকল্পটি হতে পারে প্রারম্ভিক অথবা বিশেষায়িত লাভজনক একটি প্রকল্প! তবে গ্রামে যাদের কৃষি জমি আছে এবং যারা যথেষ্ট কাঁচা ঘাসের জোগান দিতে পারবেন গরুকে তারা এই প্রকল্পটি চোখ বন্ধ করে হাতে নিতে পারেন।

এই জন্য আপনাকে প্রথমে ৪/৫ টি দেশী গাভী কিনতে হবে যেগুলি ৩/৪ লিটার দুধ দেয় এবং তাদের ক্রয়মূল্য হবে সর্বোচ্চ ৩৫-৪৫ হাজারের মধ্যে। গাভীগুলি ২/৪/৬ দাঁত এই বয়সের হতে হবে। একটি সাদামাটা কিন্তু মজবুত গোয়ালঘর বা শেড তৈরী করতে হবে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এবং এই টাকায় ৪/৫ টা দেশী গাভী রাখা যায় এমন শেড অনায়াসেই করা যায়।

দেশী গাভী গুলি যাতে বছর বিয়ানো হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। এই জাতীয় গাভীর দৈনিক সর্বোচ্চ দুই কেজি দানাদার খাদ্য লাগতে পারে। কোনোটা হয়তো একটু কম খাবে কোনোটা হয়তো একটু বেশী। তবে এদের পর্যাপ্ত ঘাস আর খড় দিতে হবে যেগুলি শ্রম আর কৃষিজ ফসল থেকেই পাওয়া যাবে অথবা ১ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে নেওয়া যেতে পারে! এখন আসা যাক আপনার পুঁজি কত হবে এই ব্যাপারে।

নীচে একটা হিসাব দিচ্ছি আমি,

*৪ টা বাছুর সহ দেশী গাভীর ক্রয়মূল্য
৪x ৪৫০০০=১৮০০০০/- টাকা।
*১ টা গোয়ালঘর তৈরির খরচ
৫০০০০/- টাকা।
গরুর খাদ্য, চিকিৎসা, ওষুধপাতি এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ
২০০০০/-টাকা।
মোট পুঁজি ২৫০০০০/- টাকা।
এবার আসা যাক আয় কত হবে সেই হিসাবে,
৪ টা গরু গড়ে ৩ লিটার দুধ দিবে এই হিসাবে মোট ১২ লিটার দুধ দিবে।
১২ লিটার দুধের বিক্রয় মূল্য প্রতি লিটার ৪০ টাকা হিসাবে,
১২x৪০= ৪৮০ টাকা।
তাহলে দৈনিক আয় হচ্ছে ৪৮০/- টাকা।
এবার আসা যাক ব্যয়ের হিসাবে,
৪ টি গাভীর জন্য ৮ কেজি দানাদার খাদ্য লাগবে যার প্রতি কেজির মূল্য ২৫/- টাকা হিসাবে,
৮ x২৫= ২০০ টাকা।
দুধ দোওয়ানোর জন্য গোয়ালার পারিশ্রমিক দৈনিক ৭০ টাকা।
তাহলে মোট ব্যয় দাঁড়ায়,
২০০+৭০ = ২৭০ টাকা।
৪ টা গাভীর জন্য আপনি নিজেই যথেষ্ট সেগুলির দেখভাল করার জন্য!

তাহলে প্রতিদিন আপনার নিট আয় হচ্ছে,

৪৮০-২৭০= ২১০/-টাকা।এর মানে দাঁড়ায় আপনি মাসে অন্তত ৬৩০০/- টাকা নিট আয় করতে পারবেন।
সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে আপনার এই রকম আয় অন্তত তিন মাস পাবেন। গাভী সঠিক সময়ে যদি গরম হয় তাহলে বাছুরের বয়স দুইমাস সময়ের মধ্যেই গাভী আবার গাভীন হবে। অতিরিক্ত হলে তিন মাস।

আপনি প্রতিমাসের আয়ের অর্ধেকই রেখে দিবেন ড্রাই পিরিওডে গাভীর খাদ্য খরচ যোগান দেওয়ার জন্য। আর গাভীকে যেই বীজ দিবেন সেইগুলি হতে পারে ১০০% শাহীওয়াল,১০০% ব্রাহমা এবং আকারে একটু বড় গাভীকে শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান সিমেন। একবছর গাভী থেকে আয় দিয়েই যদি আপনি খামার চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে বছর শেষে বাছুর বিক্রি করেই আপনি পুঁজির একটা বড় অংশ তুলে আনতে পাগ্রাম কেন্দ্রিক নতুন গরুর খামার যারা করতে চান তারা যদি এভাবে শুরু করেন তাহলে তাদের শতভাগ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ খামারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে কেউ রুখতে পারবেনা এটা নিশ্চিত!

আমার দেওয়া হিসাব গুলিতে কিছু কম বেশী থাকতে পারে,কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত। পোস্টটি পড়ে অনেকে হয়তো আমার থেকে ভালো কিছু দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। কমেন্টে সেইগুলি আলোচনা করলে পোস্টটি আরো সম্বৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে! ধন্যবাদ সবাইকে।
রেন বা আপনার খামারটিকে আরো সম্প্রসারণ করতে পারেন।

পশুর চিকিৎসাঃ

খামারে পালন করা গরুর চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী কোন পশু হাসপাতাল বা চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে কিনা তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। যদি না থাকে তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। খামারের আশপাশে ওষুধের দোকান আছে কিনা বা ভাল দক্ষ এ আই কর্মীদের পাওয়া যায় কিনা তাও বিবেচনা করে দেখতে হবরুন

আরও পড়ুনঃ গাভী পালনে যে পরামর্শগুলো মেনে চলা জরুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *