পুষ্পা সিনেমার বিষয়ে বিস্তারিত । ২০২২
গত বছর শেষের মাসে মুক্তি পায় আল্লু অর্জুনের ‘পুষ্পা’। এখনও এক মাস পার করেনি, অথচ ব্লকবলাস্টার হিট এই মুভি। গত বছর ২৫ শে ডিসেম্বর থেকে ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চুটিয়ে ব্যবসা করে এই দক্ষিণী সিনেমা। প্রায় চারটে ভাষায় এই সিনেমা মুক্তি পায়। দক্ষিণী ঘরানার সিনেমা হলেও বাংলার দর্শক থেকে হিন্দি সিনেমা প্রেমীরা সকলের মুখে শুধুই আল্লু অর্জুন ও চন্দনকাঠ চুরির গল্প।
তামিলনাড়ুর পুষ্পা সিমের সিনেমা আজকেই আমি উস্কা সিনেমার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দেব পুষ্পা সিনেমা পরিচালক ও কত ভাষায় ছবিটি করানো হয়েছে।
শুরুতে পুষ্পা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল মহেশ বাবুর। আর আইপিএস ভবর সিং চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল যীশু সেনগুপ্তর। সিনেমায় আল্লু অর্জুন ওরফে পুষ্পার সাথে চন্দন দস্যু বীরাপ্পানের বেশ সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়।
ছবি: পুষ্পা:দ্য রাইজ
পরিচালনা: সুকুমার
প্রযোজক: ওয়াই নবীন এবং ওয়াই রবিশঙ্কর
অভিনেতা: অল্লু অর্জুন, রশমিকা মন্দানা, ফাহাদ ফাসিল। সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রে রয়েছেন অজয়, রাও রমেশ, ধনঞ্জয়, অজয়, কল্পলতা।
চিত্রনাট্য ও ডায়লগ: সুকুমার
চিত্রগ্রাহক: মিরোস্লা কুবা ব্রজেক
প্রোডাকশন কোম্পানি: মুত্তামশেট্টি মিডিয়া এবং মৈত্রী মুভি মেকার্সের
রেটিং: ৪/৫
গল্প: পুষ্পা- দ্যা রাইস, গল্পের মূল বিষয় লাল চন্দন কাঠ পাচার এবং এই পাচারের সাথে যুক্ত চোরাকারবারিদের সিণ্ডিকেটের গল্প। পুষ্পারাজ এক সাধারণ শ্রমিক। যে পরে জড়িয়ে পড়ে চন্দন কাঠ পাচারে। সে বুদ্ধি করে বিভিন্ন ভাবে কাঠ পাচার শুরু করে। পুষ্পা ধীরেধীরে সিণ্ডিকেটের মধ্যে নিজের প্রভাব বাড়াতে শুরু করে এবং এই ব্যবসার মাথা মঙ্গলম শ্রীনুকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। মূল গল্পের সাথে একটি সাইড স্টোরি রয়েছে যেখানে পুষ্পা তার জন্ম পরিচয় নিয়ে সন্দিহান।
যে কারণে প্রেমিকার সাথে তার বিয়ে ভেঙে যায়। কিন্তু ভিলেনকে জখম করে সেই প্রেমিকাকেই সে উদ্ধার করে। গল্পে দুজন পুলিশ অফিসারের প্রসঙ্গ এসেছে। প্রথম জন ডিএসপি গোপিন্দাপ্পা। যে পুষ্পার উত্থানের প্রথমদিকে বাধাদানকারী অফিসার আর দ্বিতীয় আইপিএস অফিসার ভবর সিং। যে পুষ্পাকে থানায় অপমান করলে পুষ্পা তাকে উচিত শিক্ষা দেয়।
পুষ্পার বিয়েতে সিনেমার প্রথম পর্বের ইতি দেখিয়েছেন পরিচালক। সিনেমার সব ভিলেনই জীবিত। পুষ্পার সাথে ছত্তিশ কা আঁকড়ার পুলিশ অফিসার ভবর সিং শেখাওয়াতও তৈরি পুষ্পার বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার জন্য। এই সব হাজারো চমক অপেক্ষা করছে পুষ্পার পরবর্তী পর্বে। অনেকটা কেজিএফ চ্যপ্টার ওয়ানের মত পরিচালক এখানে শুধু গল্পের শুরু দেখিয়েছেন যা একাধিক পর্বে রোমাঞ্চ নিয়ে শেষ হবে।
অভিনয়: সিনেমায় আল্লু এবং রেশমিকা মন্দানার অভিনয় দর্শক বেশ উপভোগ করেছে। সিনেমার নাচ-গান, অভিনয়, গল্পের জমাটি বুনন প্রশংসার দাবি রাখে। আইটেম গানে দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থাকে বেশ মানিয়েছে। অন্যান্য দক্ষিণী ছবির প্লটের মত এই ছবির প্লটও একেবারে অভিনব। কেজিএফে যেমন স্বর্ণখনি অঞ্চলের কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছিল পুষ্পায় তেমনি প্রাধান্য পেয়েছে লাল চন্দন কাঠ পাচারের কাহিনি।
পরিচালক আল্লু অর্জুনের লুক ও মেকাপের দিকে বিশেষ দৃষ্টি যেমন দিয়েছেন তেমনি ভিলেন চরিত্রগুলির মেকাপও কাবিলে তারিফ। ফাহাদ ফাসিল অভিনয় করেছেন আইপিএস ভবর সিং চরিত্রে এবং মঙ্গলম শ্রীনুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনীল ভার্মা এই দুটি চরিত্রের মেকাপ একেবারে ভিন্নরূপে তাদেরকে দর্শকের সামনে পেশ করেছে। এছাড়া ধনঞ্জয় হয়েছেন জলি রেড্ডি, অজয় ঘোষ হয়েছেন কোনডা রেড্ডি, সাতরু হয়েছেন ডিএসপি গোবিন্দাপ্পা এবং কল্পলতা হয়েছেন পুষ্পা রাজের মা।
চিত্রনাট্য ও ডায়লগ: “পুষ্পাকো কিসিনে ফ্লাওয়ার সমঝ লিয়া থা, উসকো সমঝায়া কে পুষ্পা ফ্লাওয়ার নেহি ফায়ার হে” পুষ্পা সিনেমার এই ডায়লগ এখন সবার মুখে মুখে ফিরছে। সুকুমারের পুষ্পা রাজ চরিত্রে ধরা পড়েছে চন্দন দস্যু বীরাপ্পানের ছায়া। চিত্রনাট্যকার এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছেন তা বেশ স্পষ্ট। আমাদের দেশে দু’ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। সাদা এবং লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্ত চন্দনে কোনও গন্ধ নেই।
কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই এই চন্দনের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে।আর এই বিপুল চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয় সারা বিশ্বে। রক্তচন্দনকে তাই কেউ কেউ ‘লাল সোনা’ও বলে। এই গাছ অত্যন্ত বিরল এবং সোনার মতোই মূল্যবান। ‘পুষ্পা’ ছবিতে যে শেষাচলম জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে রক্তচন্দন ওই শেষাচলম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলেই পাওয়া যায়। তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিতোর এবং কাডাপ্পা জেলাতে এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভাল হয়। চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক সুকুমার দক্ষিণের বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে লোকেশন নির্বাচন করেছেন। সুকুমারের বাস্তব প্রেক্ষা।