সংবাদ

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করল সরকার

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করল সরকার

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা চূড়ান্ত করল সরকার 2023

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মজুরি নিয়ে কথা বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা থেকে ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভার পর পোশাক শ্রমিকদের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আরএমজি শিল্পের বাস্তবতা এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে শ্রমিকরা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।’

তবে সভায় পোশাক শ্রমিকদের রেশন দেওয়ায় বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সরকার তাদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড চালু করার পরিকল্পনা করছে বলে জানান মন্নুজান সুফিয়ান।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করল সরকার

 

 

আন্দোলনরত পোশাক কর্মীদের কাজে ফেরার আহ্বানও জানান তিনি।

এর আগে আজ শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৪৮০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেয় দেশের তৈরি পোশাক খাতের মালিকপক্ষ।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) মজুরি বোর্ডের সভায় মালিকপক্ষ এই প্রস্তাব দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

প্রসঙ্গত, ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গত সপ্তাহখানেক যাবত দেশের পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। অন্যদিকে মালিকপক্ষ প্রথমে ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।

এ নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ও তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হয়।

পরে ঢাকার আশুলিয়ায় ৩টি কারখানা ভাঙচুর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগে আশুলিয়া থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ।

মামলাগুলোতে উসকানি ও ভাঙচুরের অভিযোগে শ্রমিক সহ দেড় হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

২০১৩ সালে পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ৭৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল নিম্নতম মজুরি বোর্ড। এরপর ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই পোশাকশ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি ঘোষণা করছি। এটা ঠিক, শিল্প বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে। তাই শ্রমিকদের বলব, আপনারা কাজে যোগ দিন। আর মালিকদের বলব আপনারা কারখানা খুলে দিন।’ মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে, শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ও অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে শ্রমিকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন—এমন মন্তব্য করে শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারও উসকানিতে কান দিয়ে বিপদ বাড়াবেন না।’

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করল সরকার

শ্রম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পোশাকশ্রমিকদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা যাই হোক না কেন প্রত্যেক শ্রমিককে একটি করে ফ্যামেলি কার্ড দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তাদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।

মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের পর পোশাকশ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করা হলো। তবে চূড়ান্ত মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি করেছে ১১টি শ্রমিক সংগঠনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’। তাদের বক্তব্য, বোর্ডের প্রস্তাব শ্রমিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। শ্রমিকনেতাদের কেউ কেউ গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণে সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, এই মজুরি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ২০১৮ সালে নিম্নতম মজুরি ছিল ৯৫ ডলার। এখন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা ৫০ পয়সা ধরলেও নতুন মজুরি দাঁড়ায় ১১৩ ডলার। তাহলে পাঁচ বছর পর এসে মজুরি বাড়ল মাত্র ১৮ ডলার। এটাকে কি মজুরি বৃদ্ধি বলে?

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করল সরকার

নাজমা আক্তার আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০-৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১০০-১৪০ টাকা আর সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ১৬৯ টাকা লিটার। যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা দিয়ে শ্রমিকেরা এই বাজারে চলতে পারবেন না। মজুরি পুনর্বিবেচনা করা হোক। মজুরি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন হলে তার দায় সরকার, মজুরি বোর্ড ও মালিকপক্ষকে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *