রূপসজ্জা ডেস্ক
মধুর যে শুধু স্বাস্থ্যগুণ আছে, এমন নয়। রূপচর্চায়ও মধু ব্যবহৃত হয়। বাড়িতে আমরা প্রত্যেকেই অল্পবিস্তর রূপচর্চা করে থাকি। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মধু কার্যকর। মধু ব্যবহারে মুখের দাগ, পিম্পল ও রিঙ্কেলস কমে। মধু ত্বক উজ্জ্বল করে।
স্বাস্থ্য ও জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতে শুষ্ক ত্বক নিয়ে অনেককে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এ মৌসুমে ত্বকের যত্নে মধু বেশ কার্যকর। আসুন, জেনে নেয়া যাক কীভাবে মধু ব্যবহার করবেন—
মধুর ফেস প্যাক
প্রথমে এক চামচ মধু নিয়ে তা পুরো মুখে লাগান। আধা ঘণ্টা পরে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি করলে মুখের ত্বক উজ্জ্বল হবে।
ডিম ও মধুর ফেস প্যাক
ডিমের কুসুম, এক চামচ দই, এক চামচ মধু এবং আধা চামচ আমন্ড অয়েল। বাটিতে সবকটি উপাদান একসঙ্গে নিয়ে ভালো করে মেশান। তারপর এ মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এবার মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা ফিরবে।
ব্রণ কমাতে মধু
ব্রণ থেকে মুক্তি পেতেও মধু ব্যবহার করতে পারেন। এক চামচ মধু ও অলিভ অয়েল নিন। দুটি উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং এ পেস্টটি মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।
মধু ও কলার ফেস প্যাক
একটি পাত্রে আধা চামচ মধু, একটি পাকা কলা ও দুই টেবিল চামচ দুধ নিন। সব উপাদান ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। হাত, পা ও মুখে লাগাতে পারেন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
শুষ্ক ত্বক
শুষ্ক ত্বকের জন্য এক চামচ মধু এবং এক চামচ অলিভ অয়েল নিন। এ মিশ্রণে লেবুর রস মেশান। কয়েক মিনিটের জন্য এটি লাগিয়ে রাখুন। এতে মুখের শুষ্কতা কমবে।
উজ্জ্বল ত্বক আর ঝলমলে চুলের জন্য দারুণ উপকারি ও সহজলভ্য সমাধান হল মধু।
খাবারের পাশাপাশি রূপচর্চায় বহুদিন থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে মধু। তবে অনেকেরই জানা নেই মধু ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। ত্বক ও চুলের যত্নে মধু অতুলনীয়।
রূপচর্চা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে ত্বক, চুল এবং নখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মধু ব্যবহারে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়।
ত্বকের নমনীয়তায়
মধু এক ধরনের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এটি বাতাস থেকে জলীয়কণা ত্বকের ভিতরে টেনে নেয় যা ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘসময় ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে মধু দারুণ উপকারী।
নিয়মিত ১ টেবিল-চামচ পরিমাণ মধু পরিষ্কার ও শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পরে কুসুমগরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বক হবে কোমল ও মসৃণ।
লোমকূপে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে
মধুতে আছে এনজাইম যা ত্বক ও লোমকূপের গভীরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। এছাড়াও মধুতে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, জজবা বা নারকেল তেল ত্বককে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
২ টেবিল-চামচ জজবা তেল বা নারকেল তেলের সঙ্গে ১ টেবিল-চামচ বিশুদ্ধ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে চোখের চারপাশের ত্বক বাদ দিয়ে মিশ্রণটি পরিষ্কার ও শুষ্ক ত্বকে হালকাভাবে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে। তারপর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
কোমলভাবে ত্বক পরিষ্কার
মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এনজাইম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ। যা ত্বক করে পরিষ্কার, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মসৃণ। অন্যদিকে, বেকিং সোডাও ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের মৃতকোষ তুলে নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে।
১ টেবিল-চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে পানিতে মুখ ধুয়ে মিশ্রণটি মুখে বা শরীরে বৃত্তাকারে হালকাভাবে মালিশ করে কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হবে।
ত্বকের কালো দাগ দূর করতে
বিভিন্ন কারণে ত্বকে দাগ হতে পারে যা ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে। মধু দাগ উঠিয়ে ত্বক করে উজ্জ্বল। এর ভেতরে থাকা অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের কালো দাগ কমাতে এবং টিস্যু পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
এছাড়াও নারকেল বা জলপাইয়ের তেল ত্বকের মরাকোষ সতেজ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের হালকা মালিশ রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বক সুস্থ রাখতে ও কোষ গঠনে সাহায্য করে।
১ টেবিল-চামচ বিশুদ্ধ মধুর সঙ্গে ১ টেবিল-চামচ নারকেল বা জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে নিতে হবে। ত্বকের যেখানে দাগ বা ক্ষত চিহ্ন আছে সেখানে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১-২ মিনিট হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে। তারপর ত্বকে গরম তোয়ালে চেপে ধরে রাখতে হবে ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত। দৈনিক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
ব্রণ দূর করতে
কিশোরী থেকে শুরু করে মোটামুটি সব বয়সের মানুষের জন্য ব্রণ একটি চিন্তার কারণ। মধুর অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের লালচেভাব ও জ্বালাপোড়া কমিয়ে ত্বক ব্রণের হাত থেকে রক্ষা করবে।
আক্রান্ত স্থানে মধু লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
গোসলে মধু
দিন দিন দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। আর এই দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ত্বক। মধুর জলীয়ভাব এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচাবে।
২ টেবিল-চামচ মধু ১ কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মেশান। তারপর বালতিতে পানিতে ঢেলে গোসল করুন। এত ত্বক পরিষ্কার থাকবে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও ত্বক রক্ষা পাবে।
চুলের কন্ডিশনার
মধুতে থাকা এনজাইম অনুজ্জ্বল চুলকে উজ্জ্বল করে। পাশাপাশি নারকেল তেল চামড়ার বাহিরের স্তরে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।
১ টেবিল-চামচ বিশুদ্ধ মধুর সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে রূক্ষ্ম চুলে ভালোমতো মালিশ করতে হবে। ২০ মিনিট রেখে তারপর ভালোভাবে মাথা পরিষ্কার করে ফেলুন।
শ্যাম্পু
চুল পরিষ্কার করতে অপরিহার্য হলো শ্যাম্পু। মধু চুলের নমনীয়তা বজায় রেখে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। পছন্দের শ্যাম্পুর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে সাধারণভাবে মাথা ও চুলে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুল রং করতে মধু
চুল হাইলাইট বর্তমান ফ্যাশনে দারুণ জনপ্রিয়। তবে রাসায়নিক রং চুলের ক্ষতি করতে পারে এই ভয়ে অনেকেই চুলে রং এড়িয়ে চলেন। তবে মধুর বিশেষ কিছু উপাদান আছে যা ধীরে ধীরে চুলের রং হালকা করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে চুল হাইলাইটস করার জন্য দারুণ কার্যকর মধু।
৩ টেবিল-চামচ মধুর সঙ্গে ১ টেবিল-চামচ পানি মিশিয়ে তা পরিষ্কার চুলে ১ ঘণ্টার জন্য লাগিয়ে রাখুন। পরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
রোদে পোড়া ভাব কমাতে
মধু ত্বকের গভীরে আদ্রতা ধরে রাখে। মধু এবং অ্যালোভেরা দুটোতেই আছে শক্তিশালি অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি যা ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমায়।
মধুর সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে রোদে পুড়ে যাওয়া স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে রোদে পোড়াভাব কমে আসবে।