রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; এই রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামে এক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়, তার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রসুন বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক ভেষজ হিসাবে সফল। রসুন কৃমি নাশ করতে, শ্বাস কষ্ট কমাতে, হজমে সহায়তা করতে, প্রস্রাবের সমস্যায়, শ্বাসনালী মিউকাস মুক্ত করতে, এ্যাজমা রোগের উপশমে, হাইপারটেনশন কমাতে, চুল পাকানো কমাতে, শরীরে কোলেস্টেরলের লেভেল কমাতে, হাড়ের বিভিন্ন রোগে রসুন সাহায্য করে। ভেষজ গুণের জন্য কাঁচা রসুন বেশি উপকারী। অ্যালিসিন দেহে কোলেস্টেরল তৈরির উৎসেচক এইচএমজিকোএ রিডাক্টেজ কে বাধা দেয় বলে জানা গিয়েছে। তবে জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারীতা।
যাঁরা সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খান, তাঁদের হৃদ্রোগের আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীর চট করে ক্লান্ত হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে রসুন। বিশেষ করে রোজ যদি কেউ এক কোয়া রসুন খান, তাঁর ডায়াবিটিসের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মত, টানা এক থেকে দুই সপ্তাহ সকালে খালি পেটে রসুন খেলে ঠান্ডা লাগার ধাঁচ যাঁদের আছে সেই সমস্যা তাঁদের অনেকটা কমে যায়। শরীরকে ডিটক্সিফাই করার কাজে রসুনের জুরি মেলা ভার।
হজমের সমস্যা, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানির মত সমস্যা রোধে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে হৃপস্পন্দেনর হার নিয়ন্ত্রনে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রসুনের।
তাই সকাল বেলা খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে দূরে থাকতে পারবেন এতগুলো রোগের হাত থেকে।
রসুন এর প্রধান সক্রিয় উপাদান অ্যালিসিন নামক সালফারযুক্ত জৈব যৌগ। অ্যালিসিন রসুনের গন্ধ ও বিখ্যাত ভেষজ গুণ দুইয়ের প্রধান কারণ।
রসুনের বিভিন্ন ডোজ হয়ে থাকে, রান্নায় ও নানা ভর্তায় রসুনের উপস্থিতি থাকে। রসুনের গুণ পেতে সকালে খালি পেটে খাওয়া উত্তম, আমাদের গ্রামবাংলায় রসুন–মুড়ি খাওয়ার একটা প্রবণতা আছে, এতে কিছু উপকার হলেও বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় কিছু ভালো ফল পাওয়া গেলেও সব ঔষধি গুণ পাওয়া যাবে না।
অনেকের ধারণা, অ্যাজমার জন্যও রসুন উপকারী, কিন্তু ব্যাপারটা ভিন্ন, এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল সক্রিয়ভাবে কাজ করে কিন্তু অ্যালার্জিক অ্যাজমা থাকলে রসুন অ্যালার্জি বাড়াতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে রসুন এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেকের রসুনে অ্যালার্জি হয়ে থাকে, আর নিয়মিত এটি খেলে যদি কোনো অসুবিধা বোধ করেন, তখন রসুন না খাওয়াই ভালো, তবে স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। অনেক ধরনের রসুন বাজারে পাবেন, তার মধ্যে দেশি এককোষী রসুন সবচেয়ে ভালো।